শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। রোববার বিকাল থেকে এর অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তবে ঘূর্ণিঝড়টি পুরোপুরি মাঠিতে উঠে আসতে সন্ধ্যার পর থেকে আরো তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগবে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৮-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, দুপুর থেকেই রেমালের অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হয় বাংলাদেশ উপকূলে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী তিন চার ঘণ্টায় ভূভাগ অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্র। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে একজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন। মোংলায় ট্রলার ডুবিতে মারা গেছে তিনজন।

ঝড় ও ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে প্লাবিত হতে শুরু করেছে উপকূলের নিম্নাঞ্চল। আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হলেও, এখনো অনেকে বাড়িঘর ছাড়েননি বলে জানা যাচ্ছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিবিসি সংবাদদাতা নাগিব বাহার জানিয়েছেন, এরই মধ্যে নদী ও খালগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জোয়ারের পানি বেড়েছে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু এলাকা।

রিমালের সবচেয়ে বেশি প্রভাব দেখা গেছে মোংলা ও সুন্দরবন এলাকায়। সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন কেন্দ্রটি ডুবে গেছে পাঁচ ফুট পানির নিচে।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ওসি আজাদ কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘দুপুরের পর থেকে দমকা বাতাসের সাথে পানিও বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে এই প্রজনন কেন্দ্রে থাকা বন্যপ্রাণীগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

বিবিসি সংবাদদাতা ও উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালে এবার সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক জলোচ্ছ্বাস নিয়ে। কেননা এরই মধ্যে যেভাবে পানি বাড়তে শুরু করেছে তার ওপর জলোচ্ছ্বাস হলে তলিয়ে যেতে নিচু এলাকার অনেক বাড়িঘর।

এরই মধ্যে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এলাকার প্রতিটি নদী ও খালে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি পানি বেড়েছে।

আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনীহা
খুলনা ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় সাত নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করে আবহাওয়া অফিস। এর আগে থেকেই দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় উপকূলীয় জেলাসমূহের আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়। রোববার সকালের দিকে এসব এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করা হয়।

এসব এলাকার উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে সতর্কতা জারি করে শনিবার সন্ধ্যা থেকেই। কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত বেশিরভাগ আশ্রয় কেন্দ্রই দেখা অনেকটা ফাঁকা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বেশ কিছু ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ঘুরেছেন বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা। গাবুরা ইউনিয়নের দাতিনাখালীর একটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে তিনি দেখতে পান, সেখানে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনা খাবার, পানি, চার্জার বাতিসহ কিছু আয়োজন করা হলেও তারপরও বাড়িঘড় কিংবা বসত ভিটা ছাড়ছেন না সাধারণ মানুষ।

একদিকে মহাবিপদ সংকেত অন্যদিকে পানি বাড়তে শুরু পরও মানুষজন বাড়িঘর ছাড়তে না চাওয়ার কারণ হিসেবে জানান, তাদের অনেকেরই বাড়িতে গবাদি পশু ও আসবাবপত্র রয়েছে। সেগুলো হারানোর ভয়েও অনেকে বাড়ি ছাড়ছেন না।

বাগেরহাটের মোংলার স্থানীয় সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন জানান, ‘মোংলা উপজেলায় এখন পর্যন্ত ১০৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সে সব আশ্রয় কেন্দ্রে বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৭-৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।’

এই এলাকায় মাইকিং করা হলেও তাতে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা। রবিবার স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর রায়েন্দা বেড়িবাঁধ এলাকায় মাইকিং করে উপকূলবাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছিলেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

তবে, অনেকে জানান আগেও এমন মহাবিপদ সংকেত দেয়ার পরও খুব একটা ক্ষয় ক্ষতি না হওয়া তারা বাড়ি ঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী না।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ৬৭৩টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং সেখানে তিন লাখেরও বেশি মানুষ এখানে আশ্রয় নিতে পারবে।

এর প্রভাবে খুলনার কয়রা, দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, তালা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ উপকূলীয় এলাকা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বিবিসি সংবাদদাতা নাগিব বাহার জানান, বুড়ি গোয়ালিনি, গাবুরা, দাতিনাখালীর বেশিরভাগ নদী ও খালের পানি বাড়তে শুরু করে সকাল থেকে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ বাঁধই ঝুকিপূর্ণ।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রিমালের মূলভাগ উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার সময় ৮-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

কয়রার সাংবাদিক সম্রাট কবির জানান, উপকূলীয় এলাকার কয়রার বেশিরভাগ বাঁধই আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ। নতুন করে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করে সকাল থেকে।

সুন্দরবনের কর্মকর্তা আজাদ কবির বিবিসি বাংলাকে বলেন, জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধগুলো সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বরগুনায় জেলায় ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এই সব বেড়িবাঁধ বেশিরভাগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডও নানা প্রস্তুতি রেখেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বাধ ভেঙ্গে পানি উঠতে পারে এমন আশঙ্কার জায়গা থেকে ৮০০ র মতো জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তলিয়ে গেছে সুন্দরবন
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রবিবার সকাল থেকে হালকা বৃষ্টিসহ দমকা বাতাস শুরু হয়। এর প্রভাবে সকাল থেকেই পানি বাড়তে শুরু করে সুন্দরবন।

সকাল ৮টা থেকে জোয়ার শুরু হয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত জোয়ার হওয়ার কথা থাকলেও বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানি বাড়তে শুরু করে।

দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র ও পর্যটন স্পটের ওসি আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট পানি বেড়ে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানির চাপ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পুরো সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বন বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতে থাকা বনরক্ষীদের এরই মধ্যে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।’

সুন্দরবনের এই কর্মকর্তা জানান, করমজল বন্যপ্রাণী কেন্দ্রে এরই মধ্যে যে সব প্রাণী রয়েছে সেগুলো কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

এরই মধ্যে মোংলা বন্দরে পন্য ওঠানামা বন্ধ রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পণ্যবাহী ৬টি জাহাজকে রাখা হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877